
Intracranial arachnoid cyst (IAC)
এরাকনয়েড সিস্ট।এরাকনয়েড কি? ব্রেইনের উপরে তিনটি আবরণী পর্দা থাকে। সব থেকে বাইরে খুব দৃঢ় বা শক্ত পর্দা , একে বলা হয় ডুরা ম্যাটার। তার ভেতরের আবরণী পর্দা অপেক্ষাকৃত নরম এবং পাতলা, এটিকে বলা হয় এরাকনয়েড ম্যাটার। এরাকনয়েড ম্যাটার এর নীচে যে আবরণী পর্দাটি তাকে বলা হয় পায়া ম্যাটার। পায়া ম্যাটার খুব ভালভাবে ব্রেইনের সঙ্গে লাগান থাকে। সিস্ট কি?- সিস্ট কে পানির থলি বলা হয়। এরাকনয়েড ম্যাটারের ভেতরে পানি জমে আটকে গেলে এরাকনয়েড সিস্ট বলা হয়। কারন- এটি একটি জন্মগত রোগ । কখনো কখনো মাথায় আঘাত বা ইনফেকশনের কারণে এরাকনয়েড সিস্ট তৈরি হতে পারে। যদিও বিষয়টি খুব কম সংখ্যায়। এরকম হলে অসুবিধা কি? কিছু এরাকনয়েড সিস্ট কোন সমস্যা তৈরি করে না। তাকে এসিমপটমেটিক এরাকনয়েড সিস্ট বলা হয়। তবে কোন সমস্যা তৈরি না করলেও এই ধরনের রোগীদের সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। দেখতে হয় সিস্টটির লোকেশন অর্থাৎ ব্রেইনের কোন জায়গাটিতে আছে, সিস্টটির আকৃতি কেমন এবং এটি ব্রেইনের কোন কাজকর্মকে ব্যাহত করছে কিনা। বিশেষ করে পানি চলাচলের পথকে ব্যাহত করছে কিনা, চোখে দেখার নার্ভকে চাপ দিচ্ছে কিনা, হরমোন তৈরি হওয়ার যে গ্রন্থি চাপ দিচ্ছে কিনা। কিছু এরাকনয়েড সিস্ট লক্ষণ তৈরি করে। যেমন এরাকনয়েড সিস্ট যদি পিটুইটারি গ্লান্ডের এর উপরে থাকে তাকে আমরা বলি সুপ্রাসেলার এরাকনয়েড সিস্ট। এ রোগীদের আমরা বলি বাবলডল সিন্ড্রোম। বাবলডল সিন্ড্রোম এর রোগীরা মাথা সামনে পিছনে ঝুকাতে থাকে। এ লক্ষন দেখেও আমরা বুঝতে পারি এরাকনয়েড সিস্ট হতে পারে। আবার কিছু সিস্ট যেটা অনেক বড় হয় যেটা শিশুদের পড়াশুনা ও অন্যান্য বুদ্ধিভিত্তিক কাজকর্মকে ব্যাহত করতে পারে। কিছু এরাকনয়েড সিস্ট মাথা ব্যথা নিয়েও আসতে পারে। অনেক সময় এরাকনয়েড সিস্ট এর জন্য খিঁচুনি হতে পারে। যদি পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটি হাইড্রকেফালাস নামক রোগ তৈরি পারে। এরাকনয়েড সিস্ট বেশি বড় হলে, উচ্চ মস্তিস্ক চাপ হলে সেক্ষেত্রে বমি বা বমির উদ্বেগ থাকতে পারে। ব্রেইন এক একটি এলাকা এক একটি কাজের সঙ্গে জড়িত। যদি হাত পা নাড়ানোর এলাকায় হয় তাহলে শরীরের একপাশ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি ব্যালান্স কন্ট্রোলের যে জায়গাটি সেরিব্লাম সেখানে এরাকনয়েড সিস্ট হলে তবে তার হাঁটাচলা কন্ট্রোল সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং আরাকনয়েড সিস্ট একটি নির্দিষ্ট রোগ লক্ষণ নাই। এটির অবস্থান, বৃদ্বির গতি ও আকৃতির উপরে ভিত্তি করে লক্ষণ নির্ভর করে। সিস্ট ধীরে ধীরে বড় হতে পারে। যদি সিস্টের ভিতরে একমুখী বাল্ব বা কপাটিকার মতো হয়, অর্থাৎ পানি ঢুকতে পারে কিন্তু বের হতে পারে না। এরকম অবস্থা তৈরি হলে সিস্ট ক্রমাগত বড়ই হতে থাকে। সেটা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। সিস্টের মধ্যে আঘাত লাগলে রক্তক্ষরণ হতে পারে, সেটি একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরীক্ষা- সিটি স্ক্যান পরিক্ষায় সিস্টের অবস্থান বোঝা যায় । আমরা ভাল করে বোঝার জন্য এমআরআই পরিক্ষা করাতে পারি। আবার সিনে এম.আর. আই নামে একটি পরিক্ষা কখনো কখনো করার প্রয়োজন পরে। চিকিৎসা- সবসময় এরাকনয়েড সিস্ট অপারেশন প্রয়োজন পড়ে না। · চিকিৎসার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহন করা যায় । · একটি এন্ডস্কপ এর মাধ্যমে একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সিস্টকে নরমাল পানি চলাচলের পথের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায় । · দ্বিতীয় চিকিৎসা হচ্ছে মাথার খুলি বড় করে কেটে মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে অপারেশন করা। তৃতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি বলা যায় সিস্টের সাথে পেটের একটি যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া । একে বলা হয় সিস্টো পেরিটনিয়াল শান্ট । যাতে করে সিস্টে পানি জমতে না পারে। কোন চিকিৎসা পদ্ধতি ভালো সেটি আসলে সিস্টের অবস্থান, আকৃতি, রোগীর বয়স প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। এটি ঢালাও ভাবে বলা যাবে না এই চিকিৎসা পদ্ধতি অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির থেকে উন্নত। তবে এন্ডস্কপি রুগীর জন্য ভালো। তবে প্রত্যেক পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এন্ডস্কপি যেমন খুব ছোট রাস্তা দিয়ে এন্ট্রি , কম কাঁটা ছেঁড়ার মাধ্যমে হয় । কিন্তু পানি চলাচলের রাস্তার সঙ্গে যোগাযোগের যে বাইপাস ছিদ্রটি করা হয় এটিও খুব ছোট হয়, ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তারপরে মাইক্রোস্কোপ পদ্ধতি যেটা কিনা ওপেন পদ্ধতি যেখানে কাঁটা ছেঁড়া প্রাথমিক ভাবে বেশি হলেও পানি চলাচলের রাস্তার সঙ্গে যোগাযোগ বেশ বড় থাকে। যার জন্য এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। আর শান্ট যে পদ্ধতি, শান্ট নিজেই একটা সমস্যা তৈরি করে অনেক সময়। শান্ট ইনফেকশন, শান্ট বন্ধ হয়ে যায়, খুলে যায়, নানাবিধ জটিলতা শান্ট নিজেই তৈরি করে। সুতরাং কোন পদ্ধতি ঝুকিমুক্ত নয়। সুতরাং যিনি চিকিৎসক নিউরোসার্জন তিনি প্রত্যেকটা রোগীর জন্য সমগ্র বিষয়গুলো চিন্তা করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।