
Moya Moya Disease
ময়া ময়া রোগের জন্য অপারেশন ও তার সম্ভাব্য ঝুকি সমুহ ময়াময়া একটি বিরল, দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে, ফলে মস্তিস্কের রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোক, খিঁচুনি এবং অন্যান্য লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে। ময়া ময়া রোগে মস্তিস্কের রক্তনালী ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এনজিওগ্রাম পরীক্ষায় রক্তনালী গুলী ধোয়ার কুন্ডলির মত দেখায় । ধোয়ার কুন্ডলিকে জাপানী ভাষায় ময়াময়া বলে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় যখন রক্তনালী অল্প বন্ধ হয় সেসময় বাচ্চা খেলাধুলা করলে অথবা খাবার খাওয়ার পরে অথবা কান্নার পরে শরীরের এক দিক দুর্বল হয়ে যায়। বিশ্রাম নিলে কিছুক্ষন পরেই এ অবস্থা ঠিক হয়ে যায়। যখন রক্ত নালী কিছুটা সংকুচিত হয় তখন মস্তিস্কের রক্ত অল্প ঘাটতি হয় কিন্তু কাজ চলতে থাকে, যখন দৌড় ঝাপ করে, ঝাল খাবার খায় বা কান্না করে সে সময় মস্তিস্কে রক্তের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। লক্ষণ: মাথাব্যথা, খিঁচুনি, দৃষ্টি সমস্যা, জ্ঞানের মাত্রা বা সংবেদনশিলতা কমা, শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত, কথা বলতে অসুবিধা, লালা পড়া, অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া, বারেবারে ক্ষণস্থায়ী ইস্কেমিক আক্রমণ (TIA), যা "মিনি-স্ট্রোক" নামেও পরিচিত। মেয়েদের ভেতরে কিছুটা বেশী দেখা যায়, কোরিয়া ও জাপানে এ রোগ বেশী পরিমানে দেখা যায়। সংকুচিত রক্তনালী বাড়তি এই রক্ত মস্তিস্ককে সরবরাহ করতে পারে না। ফলে শরীরের বিপরীত দিকে সাময়িক দূর্বলতা দেখা দেয় , কথা জড়িয়ে যায়, দেখতে অসুবিধা হয়। বিশ্রাম নিলে মস্তিস্কের রক্তের চাহিদা কিছুটা কমে আসে ফলে দূর্বলতা কমে যায়। এ অবস্থাকে ট্রানজিয়েন্ট হেমিপেরেসিস বলে । ট্রানজিয়েন্ট হচ্ছে সাময়িক, হেমি অর্থ একদিকে , আর পেরেসিস অর্থ দূর্বলতা। এ অবস্থায় চিকিৎসা না নিলে স্ট্রোক হতে পারে। পরীক্ষা সমুহ: • সিটি/ এম,আর,আই- রক্ত সরবরাহের ঘাটতি (ইস্কেমিক স্ট্রোক), রক্তক্ষরন। • সেরিব্রাল এনজিওগ্রাফি – মস্তিষ্কের এবং তার চারপাশে রক্ত নালীর বিকৃতি এবং অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করা যায়। এটি তিন ধরনার হতে পারে, ডিএসএ, সিটি এন্জিওগ্রাম, এমআর আই এন্জিওগ্রাম। প্রতিটি এন্জিওগ্রামের নিজস্ব স্বকীয়তা রহিয়াছে। • পারফি্উশন এমআরই MRI Perfusion Weighted Imaging (PWI) পরীক্ষা সম্পর্কিত তথ্যঃ এ পরীক্ষা পদ্ধতি সাধারন এম আর আই পরীক্ষার মতই। শিশুদের ক্ষেত্রে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয়। এ পরীক্ষায় কন্ট্রাষ্ট ইন্জেকশন দেওয়া লাগে বিধায় পরীক্ষা করার আগে কিডনী পরীক্ষা একান্ত জরুরী। পারফিউশন পরীক্ষা করার আগে বাচ্চাকে ৪ ঘণ্টা মুখে ও পরীক্ষা শেষে আবার ৪ ঘন্টা খাবার বন্দ্ব রেখে সেই সময়ে সঠিক পরিমাণে আইভি স্যালাইন ও অক্সিজেন দিতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও পর্যাপ্ত পরিমানে আইভি স্যালাইন ও অক্সিজেন দিতে হয়L কেন এ পরীক্ষা করা হয়? এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি গ্রাম ব্রেইনে কতটুকু রক্ত আছে তা জানতে পারা যায় (CBV)। পাশাপাশি ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিছু রক্ত বা অক্সিজেন সঞ্চিত রাখে (Vascular Reserve) । সঙ্গে DWI পরীক্ষা করলে কতটুকু মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা অপারেশনে কতটা উপকার হবে বুঝতে পারা যায় । নির্দিষ্ট এলাকায় রক্ত সরবরাহের গতি সম্পর্কে জানা যায় (rCBF)। আক্রান্ত এলাকা দিয়ে রক্ত চলার জন্য কতটা সময় প্রয়োজন বুঝতে পারা যায় (MTT, TTP)। সুতরাং, ব্রেইন এর রক্তসল্পতা সস্পর্কিত যতগুলো রোগ আছে যেমন ষ্ট্রোক বা ময়া ময়া ডিজিজ এ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সতর্কতাঃ ময়া ময়া ডিজিজ রোগের ক্ষেত্রে খুব কম হলেও এ পরীক্ষা করার সময়ে নতুন ষ্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আইভি স্যালাইন, অক্সিজেন বা পরীক্ষা পরবর্তী সময়ে বাচ্চা কান্না না করলে নতুন ষ্ট্রোক এর ঝুকি এড়িয়ে চলা সম্ভব। এপরীক্ষা করার পূর্বে দায়িত্ব প্রাপ্ত Anesthesiologist এর সাথে রোগীর অভিভাবক কথা বলে নিবেন। • এম.আর.আই – সিস প্রটোকল – ইন্টারনাল ক্যারোটিডের ডায়ামিটার দেখার জন্য • ভিজুয়াল প্রফাইল • কোয়াগুলেশন প্রফাইল। কেন বাচ্চার অপারেশন করাবেনঃ মোয়ামোয়া রোগের অস্ত্রোপচার মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে রোগের অবনতি ধীর করতে বা বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি স্ট্রোকের কারণে স্নায়বিক অবনতি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। অস্ত্রোপচার রোগের অগ্রগতি ধীর করে বা বন্ধ করে। মোয়ামোয়া ধমনীর উপর চাপ কমায় , স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় সময়মত অপারেশন না করলে কি হবেঃ অপারেশন না করলে স্ট্রোক হয়ে ব্রেন স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। রক্ত সরবরাহ ঘাততি থাকার করনে সময়িক দুর্বলতা বা কথার জড়তা হতে পারে, একে টি. আই এ বা ট্রান্সজিয়েন্ট ইস্কেমিক স্ট্রোক বলে। যদি রক্ত সরবরাহ পুন: স্থাপিত নাহয় তাহলে টিআইএ পুনআইএ পূর্ন স্ট্রকে রূপ নিয়ে ব্রেইন টিসু পার্মানেন্ট ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। টি. আই এ অংশ অপারেশনের পরে কার্যক্ষম হওয়ার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়া অংশ উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ কারনে ব্রেন পূর্ন কার্যক্ষমতা ফিরে নাও পেতে পারে। অপারেশনের আগের প্রস্তুতিঃ অপারেশনের ১ থেকে ২ দিন পূর্বে ভর্তি হতে হবে। আগেই বাচ্চার চুল ফেলে নিতে হয়। এন্টিকোয়াগুলেন্ট, এসপিরিন বা অন্য ঔষধ নিয়মিত খেলে আগেই চিকিৎসককে জানান এবং ঔষধ দুটি সাত দিন পূর্ব থেকে বন্ধ রাখুন। স্লিপ এপনিয়া, ল্যারিন্গোমেলাসিয়া, হার্টে ছিদ্র, রক্ত জমাট বাথার জটিলতা, হার্টের পেসমেকার, কোনো এলার্জি থাকলে আগেই চিকিৎককে জানান। সাধারনত রক্ত প্রয়োজন হয়, তবে এবং আরও একজন রক্তদাতা রেডী রাখা ভাল। স্বাভাবিক খাবার ও পুস্টিহীনতার জন্য পুস্টিবিদের সহযোগীতা নিতে হবে। অপারেশনের পরে ও পূর্বে কাশি, জ্বর, শা্সকস্ট বা খিচুনি জনীত সমস্য থাকলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কেয়ার নিতে হবে। অপারেশনের পূর্বে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে (Dancel Shampoo) ড্যানছেল শাম্পু দিয়ে মাথা পরিষ্কার ও গোসল করে দিলে ভাল হয়। আপারেশনের পূর্বে ৪-৬ ঘন্টা মুখের খাবার বন্ধ থাকে। এ সময়ে স্যালাইন দেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নুতন ধোয়া পরিস্কার কাপড় ও ডায়াপার (প্রয়োজনে) পরিয়ে মা/ বাবা অথবা কোনো গার্ডিয়ান শিশুর কাছে থাকতে হবে, অজ্ঞানের প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি বাইরে যাবেন, না হলে শিশু ভয় পেতে পারে। এ সময়ে ধাতব তাবিজ, মাদুলী, বা কোনো গহনা থাকলে নিজেরা খুলে রাখবেন। একটু বড় মেয়েদের জন্য- যদি মাসিক চলতে থাকে তাহলে অপারেশনের তারিখ পিছিয়ে দিতে হবে। অপারেশনের পূর্ব চিকিৎসকের সঙ্গে ব্যাক্তিগত ফোন নাম্বার বিনিময় করবেন। অপারেশনের সময়ে প্রসাবের রাস্থায় ক্যাথেটার করতে হবে। অপারেশন সম্পুর্ন অজ্ঞান করে এ অপারেশন করতে হয়। অপারেশনে ৫ থেকে ৫.৫ ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। (প্রয়োজনে) অপারেশনের পরে এক রাত বা তার বেশী সময় বাচ্চার আইসিইউ তে থাকতে হয়। এনসেফালোডুরোআর্টেরিওসিনাঞ্জিওসিস (EDAS) হল অস্ত্রোপচারের রিভাস্কুলারাইজেশনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় পরোক্ষ কৌশল (চিত্র 1)। পৃষ্ঠীয় টেম্পোরাল ধমনীর (STA) প্রতিটি শাখা ব্যবহার করা যেতে পারে অপারেশন পরবর্তী যত্নঃ শীতের সময় বাচ্চার অপারেশন করা হলে ১ টি ওয়ার্মার কিনে রাখবেন। ওয়ার্মার দেয়ালের দিকে মুখ করে চালু করেবেন, কখনোই গরম বাতাস সরাসরি বাচ্চার গায়ে লাগাবেন না। অপারেশনের পরে বাচ্চাকে খেলনা, গান বা মোবাইল ফোন অথবা বাচ্চার পছন্দের কোন খেলনা দিতে হবে। সাধারনত অপারেশনের ৩ থেকে ৪ দিন পরে বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। । খিচুনীরোধী ঔষধ অপারেশনের পরে চলতে থাকে। রোগীকে কোলে নিতে কোনো ভয় নাই, সেলাইয়ের জায়গা চিকিৎসক না বলা পর্যন্ত ভিজাবেন না। চুলকালে, বা ড্রেসিং ভিজে গেলে বা ড্রেসিং খুলে গেলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। ছুটির সময় সকল তথ্য লিখে দেওয়া হবে। মা-বাবা সহ যেসব গার্ডিয়ান বাচ্চার যত্ন নিবেন তারা পরিষ্কার কাপড় পরে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিবেন। হাসপাতাল থেকে ছুটির পরের যত্নঃ সাবধানতা: ১. বেশী দৌড়-ঝাপ করবে না। ২. প্রচুর পানি, জুস এবং লিকুইড খেতে হবে ৩. ঘাম হয় এমন কাজ করবে না। ৪. ঝাল খাবার খাবে না ৫. কান্না করবে না। সমস্যা হলে প্রাথমিক সর্তকতা: ১. বাচ্চাকে শান্ত করে বিশ্রাম নিতে দিন, পানি বা তরল খাবার প্রদান করুন ২. সম্ভব হলে অক্সিজেন দিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে এ রোগের সঙ্গে খিচুনী, মাথা ব্যথা , উচ্চ রক্ত চাপ থাকতে পারে। ছুটির ৭-১০ দিন পরে চিকিৎসককে আবার দেখাবেন। সাধারনত ১৪ দিন পরে গোসল করানো যায়। কি কি খেয়াল রাখবেনঃ বাচ্চার মাথা ব্যাথা করছে কিনা, বমি করছে কিনা, বাচ্চা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে কিনা, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করছে কিনা, জ্ঞানের মাত্রা কমে যাচ্ছে কিনা, হাঁটা চলার নিয়ন্ত্রণ (হাঁটতে পারা বাচ্চা) কমে যাচ্ছে কিনা, চোখে ঝাপসা দেখা, ডাবল দেখা অথবা দেখতে না পাওয়া, খিচুনী, অজ্ঞান হয়ে যায় কিনা,