
ইতিহাস- বর্ত্তমান-ভবিষ্যত
গীতা-য় "বর্ণ" কথাটা কর্ম এবং গুণ অনুসারে ব্যাখ্যা করা হয়েছে (উদাহরণ: গীতা ৪.১৩ — চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং, গুণকর্মবিভাগশঃ অর্থাৎ গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে বর্ণব্যবস্থা তৈরি)। পরে সমাজে জন্মভিত্তিক বর্ণবাদ চালু হলো, যা গীতার মূল দর্শনের বিপরীত। এই ভ্রান্তি (ভূল) থেকে মানবসমাজে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে — বিভাজন, বৈষম্য ইত্যাদি। এই সমস্যার সমাধানে দরকার: মানু সংহিতা ও অন্যান্য পুরাতন গ্রন্থকে ভালো করে স্টাডি করা গীতার আসল বক্তব্য ঠিকভাবে বোঝা, এবং ভুল ব্যাখ্যার সমাধান খোঁজা। ব্যক্তি আমি মনে করি- গীতা থেকেই প্রথম বিভ্রান্তি শুরু: গীতা "গুণ ও কর্ম" ভিত্তিক পেশাগত শ্রেণিবিন্যাস করেছে। উদ্দেশ্য ছিল সংগঠনগত শৃঙ্খলা (chain of command) ও দায়িত্ববোধ বাড়ানো। এটি স্কুলের হেডস্যার, জুনিয়র শিক্ষক, ড্রাইভার ইত্যাদির মতো উদাহরণ — যেখানে কাজের জন্য পজিশন আছে, কিন্তু সম্মানের ভেদ নেই। পেশা গত পরিবেবেশের ভেতরে ছোট- বড় থাকতে পারে। বআকীরা তার কমান্ড মানেন, কিন্তু কাজ শেষে একজায়গায় বসে চা পান করেন। জুনিয়র শিক্ষক প্রমোশান পেয়ে সিনিয়র হয়ে হেড স্যার হন। কিন্তু বিষয়টি কখনোও সামজিক মর্যাদায় বিভেদ করেনা। এজন্য বর্ন ভেদ প্রথা দরকার ছিলনা মনে হয়। সমস্যা কোথায় ঘটল: গীতায় যেখানে ‘কর্ম’ (পেশা) এবং ‘সমাজ জীবন’ আলাদা রাখা উচিত ছিল, সেখানে দুটোকে মিশিয়ে ফেলা হলো। সময়ের সাথে জন্মভিত্তিক বর্ণভেদ তৈরি হলো, যা গীতার মূল উদ্দেশ্য ছিল না। শ্রীকৃষ্ণের দৃষ্টিভঙ্গি: তিনি মূলত এক গভীর সংকটকালে (কুরুক্ষেত্র) সংগঠন ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনিতে মানবসম্মান ও সমতার ইচ্ছা স্পষ্ট ছিল। মানুর ভূমিকা: রাজা মানু গীতার ওই বর্ণভিত্তিক ধারণাকে আইন আকারে কঠিন নিয়মে পরিণত করলেন। এই আইনের ফলে মানবতার বিরুদ্ধেই সামাজিক বৈষম্য চিরস্থায়ী হয়ে গেল। ভবিষ্যৎ করণীয়: মানু ও গীতার মূল বক্তব্য গভীরভাবে অধ্যয়ন করা। ভুল বোঝাগুলো চিহ্নিত করা। মানবিকতা রক্ষার জন্য সংশোধনের চিন্তা করা। এখন যদি একটু বিশ্লেষণ করি: গীতা'র আসল শিক্ষায় মানুষের মর্যাদা কখনো হ্রাস পায় না, পেশার ভিন্নতায়। মানু সংহিতা অবশ্যই জন্মভিত্তিক বর্ণবিভাগকে কঠিনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে — যেমন, নিম্নবর্ণের জন্য কঠোর ও অবমাননাকর শাস্তির বিধান। এই ভুলের শিকড় খুঁজতে গেলে কিছু প্রশ্ন সামনে আসে: শ্রীকৃষ্ণের সময়ের অবস্থা কি এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে অস্থায়ীভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এমন পেশাগত বিভাজন দরকার ছিল? পরবর্তীতে রাজা মানু কি রাজ্য শাসনকে সুসংহত রাখতে জন্মভিত্তিক কঠোর আইন করেন? নাকি শ্রেণিস্বার্থে উচ্চবর্ণেরা এগুলোকে কাজে লাগাল?